আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কোন সিস্টেমে হয়?

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কোন সিস্টেমে হয় চলুন জেনে নেওয়া যাক –

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২৪
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রতি চার বছর পরপর হয়ে থাকে।
অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন না। এক্ষেত্রে তাদের রয়েছে চারটি জটিল প্রক্রিয়া।

প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর যোগ্যতা : বয়স কমপক্ষে ৩৫ বছর হতে হবে। জন্মগত ভাবে আমেরিকার নাগরিক এবং ১৪ বছর আমেরিকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। যাতে করে তাদের সংস্কৃতি, নিয়মনীতি, বিধি-নিষেধ, আইনকানুন সবকিছু সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকে। এবং দেশপ্রেমী হয়। এই শর্তগুলো পূরণ করলে যে কেউ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারে। কোনো ব্যক্তি কারাগারে থাকলে সেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। সংবিধানের এই নীতির একটাই কারণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কেউ যেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে বঞ্চিত না হতে পারে।

প্রথমটি হলো প্রাইমারি ও ককাস :

প্রাইমারি ও ককাস কি?

নির্বাচনী বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে শুরু হয় প্রাইমারি ও ককাস সিলেকশন।
জনপ্রিয় দলগুলো (যেমন:ডেমোক্রেটিক,রিপাবলিকান) যারা নির্বাচনে লড়তে ইচ্ছুক তাদের নিয়ে শুরু করে দলের সদস্যের মধ্যে ভোটাভুটি। যিনি সর্বোচ্চ ভোট পাবেন তিনি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ের জন্য দলের মনোনয়ন এর যোগ্যতা অর্জন করেন । যেটিকে প্রাইমারি বলে। ককাস ও প্রাইমারি পর্যায়ের উদ্দেশ্য একই। অনেকেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিতে চান, এতে জাতীয় পর্যায়ে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। তাই যোগ্য এবং জনপ্রিয় ব্যক্তিকে বাছাই এবং অযোগ্য ব্যক্তিদের ছাটাই করাই প্রাইমারি ও ককাসের মূল কাজ। যাতে সাধারণ নির্বাচনে যোগ্য ব্যক্তিরা বিরোধী দলের সাথে লড়তে পারে। এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে রাজনৈতিক দলের সদস্যরা।

দ্বিতীয়টি জাতীয় সম্মেলন :

জাতীয় সম্মেলন কি?

প্রাইমারি এবং ককাস সম্পন্ন হলে সর্বোচ্চ সমর্থনপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের নিয়ে ৫০ টি অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধিরা জাতীয় সম্মেলন(কনভেনশন) করেন। প্রতিনিধিরা (ডেলিগেটরা ) জনগণের প্ৰতিনিধিত্ব করার জন্য তাদের পছন্দের প্রার্থীকে সমর্থন দেন। সম্মেলন শেষ হলে ফলাফল জানানো হয়। প্রতিটি দলের সর্বোচ্চসংখ্যক ভোটগৃহীতা প্রার্থী দলের মনোনয়ন পেয়ে থাকেন। এবং চূড়ান্ত করা হয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। তখন চূড়ান্ত মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী তার পছন্দ অনুযায়ী একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বেছে নেন। এরপর শুরু হয় জনগণের সমর্থনের জন্য নির্বাচনী প্রচারণা।
ন্যাশনাল কনভেনশনের(জাতীয় সম্মেলন) মাধ্যমে চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রতিনিধিদের দ্বারা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনয়ন পেয়ে থাকেন নির্বাচনী বছরের জুলাই মাসে।
সবশেষ ২০২৪ এর নির্বাচনের জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার মনোনয়ন বাতিল করে কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দেন। এতে বাকিরাও সমর্থন দেন। আর এ কারণেই কমলা হ্যারিস এবারের ডেমোক্রেটিক দলের চূড়ান্ত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।

তৃতীয় ধাপ সাধারণ নির্বাচন :

সাধারণ নির্বাচন কি?

জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণা চালান প্রার্থীরা। তখন একধরণের আমেজ আর উৎকণ্ঠা নিয়ে দিনাতিপাত করেন দুই দলের সদস্যরা এবং প্রার্থীরা। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হয় সাধারণ নির্বাচন। যেখানে জনগণ মূলত প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কে ভোট দেননা । ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যদের ভোট দিয়ে থাকেন। শুধুমাত্র ব্যতিক্রম হলো মেইন এবং নেব্রাস্কা রাজ্যে তারা ব্যালট পেপারে প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে সরাসরি ভোট দেন। সারাদিন ব্যাপী নির্বাচন হয়ে থাকে। প্রধান শহরগুলোতে সাধারণ নির্বাচন হয়ে থাকে।সরাসরি অংশগ্রহণ করা যায় আবার মেইল এবং ডাকযোগাযোগের মাধ্যমেও আগাম ভোট দেয়া যায়।

সর্বশেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি হলো ইলেক্টোরাল কলেজ :

ইলেক্টোরাল কলেজ কি?

কংগ্রেসের সিনেট ও হাউস অফ রিপ্রেসেন্টেটিভের মোট সদস্যদের ইলেক্টোরাল কলেজ বলে। প্রত্যেক সদস্য একেকজন ইলেক্টর।

যুক্তরাষ্টের নির্বাচনের ব্যতিক্রমী এবং গুরুত্ত্বপূর্ণ ধাপ হলো ইলেক্টোরাল কলেজ। যার সদস্যরা সাধারণত কংগ্রেসের সিনেটের ১০০ জন সদস্য এবং নিম্ন কক্ষের হাউস অফ রিপ্রেসেন্টেটিভের সদস্য ৪৩৫ জন। মোট(১০০ + ৪৩৫)=৫৩৫ জন এবং কলম্বিয়ার ৩ জন। সব মিলিয়ে মোট ইলেক্টর সংখ্যা ৫৩৮ জন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে একজন প্রার্থীকে সর্বোচ্চ ২৭০ টি ইলেক্টোরাল কলেজ এর ভোট পেতে হয়।
নভেম্বর এর সাধারণ নির্বাচনে যেসব ইলেক্টর নির্বাচিত হয়েছেন তারাই মূলত জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে থাকেন।
ইলেক্টোরাল কলেজ এর কিছু ব্যতিক্রম এবং নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে যেটি হলো “উইনার টেক অল” পদ্ধতি। মানে হলো কোনো রাজ্যে যে প্রার্থী সর্বোচ্চসংখক ভোট পেয়েছে ধরে নেয়া হবে ওই রাজ্যে সবগুলো ভোট ওই প্রার্থী পেয়েছে। ওই রাজ্যের সবগুলো ইলেক্টোরাল সমর্থন ও তিনি পেয়ে যান। এতে করে আমেরিকায় সরাসরি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি থাকলেও এই কারণে বিশ্বব্যাপী আমেরিকায় প্রকৃত গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মতভেদ রয়েছে।

চিন্তালয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন